মেঘে মেঘে যে কত শত রং হয় তা আসলে বর্ণনা করে বোঝানো অসম্ভব….ট্যুরন্ত’র সাথে মেঘালয় ট্যুরে ঠিক এরকম অনুভূতিই হয়েছিলো…..যা দেখছিলাম তা কোন ভাবে মোবাইল বা ক্যামেরায় ধরা যায়নি শুধু মনের মাঝেই এই মেঘ বন্ধী হয়েছে
সব সময় সিলেট ঘুরার সময় ঐ পাশের পাহাড়,ঝরনাগুলোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম আর মনে মনে ভাবতাম ইশ! কেনো ওদের ভাগেই সব ঐ পাহাড়গুলো যদি আমাদের হতো !!
মেঘ, পাহাড় ও বিশাল বিশাল ঝর্না মিলে অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মেঘালয় রাজ্য। অপার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েই মেঘালয় এর রাজধানী শিলংকে(৪৯০৮ ফুট উচ্চতা) ব্রিটিশরা নাম দিয়েছিলো প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবন এলাকা চেরাপুঞ্জি্, এশিয়ার সবথেকে পরিছন্ন গ্রাম মাউলিলং ভিলেজ, জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি লিভিং রুট ব্রিজ, সচ্ছ পানির সোনেংপেডেং সব কিছুই নিয়েই সমৃদ্ধ এই মেঘালয়।
ট্যুরন্ত ট্রাভেলার্স এর অভিজ্ঞ টীম এর সহায়তায় ডাউকী বর্ডার দিয়ে মাল্টিপল ভিসা নিয়ে জুন এর ১৮ তারিখ রাতে আমরা ঢাকা থেকে রওনা হই… বর্ষাকে কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য জুন_সেপ্টেম্বর মাসের যেকোনো সময় মেঘালয় ভ্রমণ এর জন্য বেস্ট। বর্ষায় এখানকার পাহাড় ও ঝর্ণা গুলো পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়।
তামাবিল-ডাউকী বর্ডার পার হতে আমাদের দুপুর হয় যায়…বর্ডারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ট্যুরন্তর ওপার এর এজেন্ট মৌনি দাদা….উনি আমাদের ড্রাইভার ও গাইড হিসেবে ছিলেন….ডাউকীতে লাঞ্চ করেই আমরা শিলং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই….শিলং যাওয়ার পথেই কিছু প্রথমে রয়েছে উমক্রেম ফলস। সারা রাতের জার্নির সকল ক্লান্তি যেন নিমিশেই উধাও হয়ে গিয়েছিলো এই উত্তাল ঝর্না দেখে… ট্যুরন্তর সব ট্রাভেলার্স রা অনেক ছবি তুলে মন ভরে শ্বাস নিলো…. উমক্রেম ফলস থেকে রিফ্রেশ হয়ে আমরা যাই বোরহিল ফলস এর দিকে যেটাকে আমরা বাংলাদেশ থেকে পান্তুমাই ফলস নামে বিছনাকান্দি থেকে দেখি।
এরপর এশিয়ার সবচেয়ে পরিস্কার গ্রাম মাওলিনং ভিলেজ। মাওলিনং ভিলেজ দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য। মাওলিনং এর পাশেই রয়েছে একটি লিভিং রুট ব্রিজ। এগুলো দেখে আমরা চলে যাই শিলং। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে যেতে এক গ্লাস মসলা দেয়া চা…আহ !!!
শিলং শহরে ঢুকেই মৌনি দাদা আমাদের বল্লেন অই দেখো তারে জামিন পার !!! এটা শুনে হঠাৎ আমরা ক্লান্তি ভুলে হুরমুরিয়ে উঠি….উঠে দেখি রাতের পাহাড়ি রাস্তায় আমরা প্রায় ৪৯০৮ ফুট উপরে আর নিচের পাহাড়ি রাস্তার বাকে বাকে যে লাইট জ্বলছে সেগুলোকে সত্যিই জ্বলন্ত তারার মতো লাগছে….এই ভালোলাগার প্রকাশ কবি সাহিত্যিক রাই করতে পারবে…আমাকে দিয়ে হবে না
দ্বিতীয় দিন ছিলো আমাদের চেরাপুঞ্জি বা সোহরা ভ্রমণ যা হচ্ছে শিলংয়ের মূল আকর্ষণ। মাউডক ভিউ পয়েন্ট,* সেভেন সিস্টার ফলস্, আরওয়া/মাওসমাই ক্যাভ, ইকো পার্ক, নোহ কালিকাই ফলস, আরওকাবা ফলস। সেভেন সিস্টার ফলস্ এ অনেক সময় সাতটা ফলস এক সাথে দেখা যায় না কিন্তু আমরা অনেক lucky যে সবগুলোই দেখতে পেরেছি আর রাস্তার বিপরীতে মনোরম দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করেছি..
এর পর দিন ছিলো মূলত শিলং কেন্দ্রিক টুরন্ত’র রিল্যাক্স ঘোরাঘুরির দিন। সকালে নাস্তা সেরে প্রথমেই গেলাম ডন বস্কো মিউজিয়াম দেখতে। বিশাল একটি মিউজিয়াম…এর পর লেডি হায়দারি পার্ক, এটি গোটা ভারত বর্ষের পরিচ্ছন্ন পার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম , উমিয়াম লেক,এটি আর্টিফিশিয়াল লেক,এখানে বোটিং এর ব্যবস্থা আছে। এলিফ্যান্ট ফলস, এটা অত্যাধিক আকর্ষনীয় একটা ফলস । আপনার মন অদ্ভুদ একটা আনন্দে মেতে উঠবে। একটা ঝর্নায় তিনটি স্তরে বিভক্ত হয়ে গেছে। মাঝে একটা ব্রীজ, অনেকগুলো সিড়ি বেয়ে অনেকটা নিচে নামতে হবে। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর,তবুও যখন উপরের দিকে তাকাবেন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য দেখে আপনার সব ক্লান্তি মুহুর্তেই ম্লান হয়ে যাবে। আমাদের অসম্ভব ভালো লেগেছিল।তাই অনেক গ্রুপ পিক আর সেল্ফী তুলেছিলাম…
আমি শহরে যতটা সম্ভব ঘুরেছি পুলিশ বাজারে সিনেমা দেখেছি। তিন দিনেই হয়ে যায়। অর্কিড লাভার দের জন্য শিলং পুরা হেভেন…. হাজার রকম অর্কিড এর চারা, বীজ, ফুল সহ গাছ পাওয়া যায়…তেমন কোনো শপিং করিনি তবে W থেকে কুর্তি আর fastrac থেকে টুকটাক কেনাকাটা করেছিলাম…আমি খুব একটা ইন্ডিয়ান ফুড লাভার না…তবে স্ট্রিট ফুড চিকেন রোল আর মম খেয়েছি….KFC আর Sub Way পেয়ে খুশিতে তাত্তারি সব খেয়ে নিয়েছি
এবার ফেরার পালা…গাট্টি বোস্কা বেধে সকাল সকাল বের হয়ে পরি ক্রাংসুরি ফলস দেখতে। ক্রাংসুরি ফলসের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। সেখানে গোসলের ব্যবস্থাও রয়েছে।আমরা ক্রাংশুরি ফলস এ যাওয়ার একটু পর শুরু হয় মুষল ধারা বৃস্টি….ট্যুরন্তর সব মেম্বার রা ইচ্ছেমত ভিজেছি….তখনি গার্ডরা এসে আমদের সরিয়ে নিয়ে গেলো কারন ঝর্না প্রবল হয়ে পানি মূহুর্তেই বেড়ে যাচ্ছিলো….ওখানেই কাপড় চেঞ্জ করে আমরা সেনাংপেডাং নদী(উমগট) এ ডাউকী ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে বিকাল চারটার মধ্যেই চলে আসি ডাউকি।
আমার মতো যারা পাহাড়, মেঘ, ঝর্না ও উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ ভালবাসেন তাদের জন্যই এই ট্যুর। অসংখ্য জানা-অজানা অনেক বিশাল পাহাড়ি ঝর্নার অপার সৌন্দর্য্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকবে মেঘালয়ের দিনগুলো
মেঘালয় ভ্রমণ করার আদর্শ সময় হচ্ছে জুন থেকে অক্টোবর। এছাড়াও ট্যুরন্তের প্রতি মাসে ২্টি করে মেঘালয়ে ট্যুর ইভেন্ট থাকে। শুধু তাই নয় ট্যুরন্ত মেঘালয়ে কর্পোরেট ট্যুর, কাস্টম ট্যুর, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর সহ আরও অনেক রকম সুব্যাস্থা করে দিতে পারে শুধুমাত্র আপনার জন্য।
আমাদের ঠিকানা:
🏠 Suite- 204, Eastenrn Commercial Complex, Kamlapaur, Motijheel- 1217.
📱Phone: 01877 72 47 96, 01877 72 47 98, 01511 08 29 47.
Comment (0)