ভূস্বর্গ কাশ্মীর ঃ

কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলেন অনেকেই। ছবির মতো সুন্দর জায়গাতে এসে ভ্রমণপিপাসুরা মনের খোরাক মিটিয়ে থাকেন। কাশ্মীরের সৌন্দর্য বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। বিশ্বের আর সব দেশের মতো বাংলাদেশি অনেক পর্যটকেরও অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা এই কাশ্মীর।

একটুরো বাংলা দেশঃ

কিন্তু আমরা কতজন জানি যে কাশ্মীরেও আছে একটি বিশেষ গ্রাম যার নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ ।  কাশ্মীরের বান্ডিপুরা জেলার আলুসা তহশিলে এ গ্রাম অবস্থিত। বান্ডিপুরা-সোপুরের মাঝ দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে ৫ কিলোমিটার হাঁটলেই পাওয়া যায় গ্রামটি। মাত্র ৭ বছর আগে কাগজে কলমে পৃথক গ্রামের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।

ইতিহাসঃ

কিন্তু কেন ‘বাংলাদেশ’ হলো এই গ্রামের নাম? আপনি জেনে অবাক হবেন, কাশ্মীরের এই গ্রামটির সাথেও ১৯৭১ এর যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৭১ সালে জুরিমন নামক এক গ্রামের ৫-৬টি ঘরে আগুন লাগে। আগুনের শিখায়জ্বলে পুড়ে যায় ঘরগুলো। গৃহহীন হয়ে পড়েন নিরীহ সাধারণ এই মানুষগুলো। তারা তখন পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে কিছুটা দূরে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা জায়গায় সবাই মিলে ঘর তোলেন। সেই বছরই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই একই সময় গৃহহীন মানুষগুলো দুঃসময় মোকাবেলা করে শুরু করেন তাদের নবজনম। তাই তারাও তাদের নতুন গ্রামের নাম রাখেন বাংলাদেশ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার নীলাভূমি হওয়ার গ্রামটি পর্যটকদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। এ সম্পর্কে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, “গত এক বছরে স্থানীয় ও বিদেশি বহু পর্যটক গ্রামটিতে ঘুরতে আসছে, এখানকার পরিবেশে মুগ্ধ হচ্ছে। তারা নৌকা চালানো, মাছ ধরা ও পাখিদের কোলাহল উপভোগ করার মতো সুযোগ পাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে বাংলাদেশ থেকেও পর্যটক আসছে।”

অবস্থান
কাশ্মীরের বান্ডিপুরা জেলার আলুসা তহশিলে একটি গ্রামের নাম বাংলাদেশ। বান্ডিপুরা-সোপুরের মধ্য খান দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে পাঁচ কিলোমিটার হাটলেই এই গ্রামটি দেখা যাবে। রোমান্টিক স্বপ্নের ভূস্বর্গ, স্বপ্নরাজ্য কাশ্মীরের একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’! চারদিকে পানি, পেছনে সুউচ্চ পর্বত, সব মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই গ্রামটির। বিখ্যাত উলার হৃদের তীরে এই গ্রামটিরও সৌন্দর্য কিন্তু কম নয়!

গ্রামের মর্যাদা লাভ
২০১০ সালে বান্ডিপুরার ডিসি অফিস ‘বাংলাদেশ’ নামক এই গ্রামটিকে আলাদা গ্রামের মর্যাদা দেন। ৫/৬ ঘর থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ গ্রামে এখন আছে পঞ্চাশেরও বেশি ঘর!

জীবিকা নির্বাহ
বাংলাদেশ গ্রামের মানুষের মাছ ধরা মূলত প্রধান জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। পাশাপাশি পানি বাদাম সংগ্রহ করাও গ্রামবাসীর অন্যতম প্রধান কাজ।

সর্বোশেষেঃ

গত তিন বছর আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে। ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো আসছেই,পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ থেকেও এখন দলে দলে পর্যটকরা আসছে। উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনা ‘বাংলাদেশে’র বাসিন্দাদের অন্যতম পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি হয় ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ, যা কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়। ‘বাংলাদেশে’র এই ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও। সবমিলিয়ে উলার লেকের তীরে অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ এখন নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-দেশান্তরে।