বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত মহিলা পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া। আমরা এই ব্লগে তার এই বিরল অর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

K2 কি ও এর অবস্থান:

K2, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৬১১ মিটার (২৮২৫১ ফুট) উপরে, মাউন্ট এভারেস্টের পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। এটি কারাকোরাম রেঞ্জে অবস্থিত, আংশিকভাবে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে এবং আংশিকভাবে কাশ্মীর অঞ্চলের একটি চীন-শাসিত অঞ্চল যা জিনজিয়াংয়ের তাক্সগোরান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির অন্তর্ভুক্ত।

পর্বোতারোহীদের কাছে K2

১৯৫৩ সালে আমেরিকান অভিযানের একজন পর্বতারোহী জর্জ বেল K2 কে ‘স্যাভেজ মাউন্টেন’ নামে আখ্যায়িত করেন অর্থাৎ বর্বর পাহাড়। এরপর এটি এই নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাংবাদিকদের জর্জ বেল বলেন, “এটি একটি বর্বর পর্বত যা আপনাকে হত্যা করার চেষ্টা করে।” বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে K2 হল সবচেয়ে বেশি বিপদজনক, চূড়ায় পৌঁছানো প্রতি চারজনের মধ্যে পাহাড়ে প্রায় একজনের মৃত্যু হয়। মাউন্ট গডউইন-অস্টেন নামেও K2 পরিচিত। স্থানিয়রা এটাকে চোগোরি নামেও ডাকে।
আরদিতো দেসিওর নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালের ইতালীয় অভিযানে ইতালীয় পর্বতারোহী লিনো লেসেডেলি এবং অ্যাকিলি কমপ্যাগননি প্রথমবারের মতো শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। K2 হল একমাত্র ৮০০০+ মিটার চূড়া যার পূর্ব মুখ থেকে কখনও আরোহণ করা হয়নি।এর আরোহণ প্রায় সবসময়ই জুলাই এবং আগস্ট মাসে করা হয়, যা সাধারণত বছরের উষ্ণতম সময়; K2 এর আরও উত্তরের অবস্থান এটিকে প্রতিকূল এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
যদিও এভারেস্টের চূড়া উচ্চতায়, K2 থেকে বেশি, K2 তে আরোহণ এভারেস্টের চেয়ে অনেক কঠিন এবং বিপজ্জনক, কারণ এটির আবহাওয়ার প্রতিকূলতা।

ওয়াসফিয়া নাজরীন কে?

ওয়াসফিয়া নাজরিন একাধারে একজন বাংলাদেশী পর্বতারোহী, কর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকর্মী এবং লেখিকা। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী এবং প্রথম বাঙালি যিনি ১৮ই নভেম্বর ২০১৫-এ সাতটি শীর্ষ পর্বতারোহণ সম্পন্ন করেন।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নাজরিনকে তাদের ২০১৪-২০১৫ সালের অন্যতম অভিযাত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাকে তার সক্রিয়তা এবং সাহসিকতার ক্ষেত্রে তার কাজের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতির জন্য বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিলো । তিনি আবার ২০১৬ সালে অন্যতম একজন নারী অভিযাত্রী হিসেবে ভূষিত হন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং অ্যাডভেঞ্চারারের যুগপত খেতাব ধরে রাখা একমাত্র মহিলা অভিযাত্রী হয়েছেন তিনি।
নাজরিন তার সফল এভারেস্ট আরোহণ বাংলাদেশের নারীদের উৎসর্গ করে বলেন: “আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ৪১ বছর আগে, কিন্তু আমাদের নারীরা এখনো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি।”

তিনি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন ২০১২ সালের ২৬ শে মে।

কিভাবে ওয়াসফিয়া K2 জয় করলেন?

চূড়ায় আরোহণের পথচলা রবিবার ১৭ই জুলাই ২০২২ শুরু হয়। ৩৯ বছর বয়সী ওয়াসফিয়া শুক্রবার ২২শে জুলাই ভোরে ৮৬১১ মিটার (২৮২৫১ ফিট) এই পর্বতের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। এই এক্সপিডিশনে আরও ১২ জন নাজরিনের টিমে ছিলেন যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আগত। ওয়াসফিয়া নাজরিনের স্পন্সর ছিলো বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানি রেনাটা।
“যখন একজন পর্বতারোহী পায়ে হেঁটে শৃঙ্গ থেকে বেসক্যাম্পে ফিরে আসে তখন শিখরের অভিযান সম্পূর্ণ হয়, যা ওয়াসফিয়া গত রাতে ১০:৫৫ মিনিটে করতে সক্ষম হয়েছিলেন” এমনটাই জানানে হয়েছিলো ওয়াসিফয়ার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এ যাত্রায় ওয়াসিফয়ার গাইড ছিলেন বিখ্যাত পর্বতারোহী নির্মল পূর্জা যিনি নিম্স ডাই নামেও পরিচিত।ছয় মাস ছয় দিনের রেকর্ড সময়ে নিম্স ডাই ১৪টি আট-হাজার (৮,000 মিটার বা ২৬,০০০ ফুটের উপরে পর্বতশৃঙ্গ) আরোহণের জন্য তিনি বিশেষ মর্যদায় ভূষিত হন।নিম্স ডাইয়ের নির্দেশনার জন্যই  এলিট এক্সপেডের প্রত্যেক সদস্যই সম্প্রতিক সময়ে K2 জয় করতে সক্ষম হয় এবং এই এক্সপেডিশনের একজন সদস্য ছিলেন আমাদের প্রিয় ওয়াজফিয়া নাজরিন। K2 জয় করতে গিয়ে উনি বৈরী আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছেন । ওনার ভাষ্য মতে, “আমরা ধৈর্য সহকারে ঝড়ের মেঘ কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি যাতে আমরা শিখরের দিকে অগ্রসর হয়ে যেতে পারি, সবকিছু ভাল আছে এবং সবাই আবিশ্বাসী! আমাদের জন্য আপনারা প্রার্থনা করুন এখানে কোন ইন্টারনেট নেই এবং কোনো খবরই নতুন নেই।” এটি পোস্ট করেছিলেন উনি গত ১৫ই জুলাইয়ে। অর্থাৎ হাজার প্রতিকূলতার মঝেও উনি দমে যান নাই।

ওয়াসফিয়া নাজরিন বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। উনি ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম অনুপ্রেরণা।